একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শোক-শ্রদ্ধায় ভাষাশহীদদের স্মরণ করেছে সমগ্র জাতি। রাতের প্রথম প্রহর থেকেই বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ দলে দলে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে জড়ো হন। ভোরের আলো ফোটার আগেই ফুলে ফুলে ভরে যায় শহীদ মিনারের বেদি।
এর আগে প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সাথে ছিলেন মন্ত্রিসভার সদস্য ও দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। এরপর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু। তাদের পর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের বিচারপতিরা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পরে তিন বাহিনীর প্রধানরা, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই এলাকা ত্যাগ করলে সর্বস্তরের জনগণের জন্য শহীদ মিনার খুলে দেয়া হয়। এরপর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজারো মানুষের ঢল নামে। কালো ব্যাজ, কালো পতাকা ও ব্যানার নিয়ে পলাশী হয়ে জগন্নাথ হলের সামনে দিয়ে সবাই ধীরপায়ে এগিয়ে চলেন শহীদ মিনারের দিকে। অনেকের পোশাক ও সজ্জাতেও ছিলো শোকের কালো রং। কণ্ঠে ছিলো সেই বেদনাবিধুর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি।
শ্রদ্ধা নিবেদন করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), জেএসডি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণতন্ত্রী পার্টি, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাসদ ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন। গতকাল ছিল সরকারি ছুটির দিন। শহীদদের স্মরণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।
সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের বিশ্বাসের বাতিঘর। বিএনপির নেতৃত্বে সারা দেশে সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবৃক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে তার মূলোৎপাটন করাই ২১ ফেব্রুয়ারির অঙ্গীকার।
শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সকাল সাড়ে ৯টায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। শ্রদ্ধা নিবেদনকালে রিজভী বলেন, ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগের পরই স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমি তৈরি হয়। তারপর আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি। আমাদের চেতনার সব কিছুকেই ঘিরে আছে ’৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারি। ভাষাশহীদদের আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। সরকার একচ্ছত্র রাজকীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশের মানুষ আজও গণতন্ত্রহারা। ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর কেন আজকে ভোটাধিকারের জন্য দাবি করতে হচ্ছে। হানাদার বাহিনী যেমন ভাষাশহীদদের দমন করতে চেয়েছিল ঠিক একইভাবে এই হানাদার সরকার জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে হরণ করছে। এই সরকার একচ্ছত্র রাজকীয় শাসনব্যবস্থা চালু করেছে।
এর আগে সকাল ৮টায় আজিমপুর কবরস্থানে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের কবরে ফাতেহা পাঠ করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এর পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসেন তারা। এ সময় বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ ছাড়াও শ্রদ্ধা জানায় সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ।
অন্য দিকে ঢাকার দুই সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সহকর্মীদের নিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছে জাসদ। জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারের নেতৃত্বে এই পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজুর নেতৃত্বে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: মশিউরের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও অন্য ক্যাম্পাস প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীরাও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অপর্ণ করা হয়। জাতীয় উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। ডেফোডিল ইউনিভার্সিটিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান শহীদ দিবস পালিত হয়েছে। মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান শহীদ দিবস পালিত হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছে।
Posted ১১:৪৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
America News Agency (ANA) | ANA